Ad

ইসলামের দৃষ্টিতে আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য



স্ত্রীর কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বামী তার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। মহব্বত ভালোবাসা বেড়ে যায়। স্বামী তাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনাও করতে চায় না। জীবনের সব পরিকল্পনা তাকে ঘিরেই হয়।
স্ত্রীর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
(১). আনুগত্য করা :
যে স্ত্রী মহান আল্লাহর হুকুমের আনুগত্যের পাশাপাশি স্বামীরও অনুগত করে সেই স্ত্রী জান্নাতি, স্বামীরও ভীষণ প্রিয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে, স্বামীর অনুগত হবে, তখন জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে।
_____মুসনাদে আহমাদ, হাদিস-(১৬৬১)
(২). ভালোবাসা :
স্ত্রী স্বামীকে অধিক ভালোবাসলে স্বামীর মনে অন্য নারীর প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না। তার বিপথগামী হওয়ারও আশঙ্কা থাকে না।
এ ধরনের নারীর জন্যই জান্নাত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের জান্নাতি রমণীরা হচ্ছে, যারা স্বামীর প্রতি প্রেমময়ী ও অধিক সন্তান প্রসবকারিণী। স্বামী রাগ করলে সে এসে স্বামীর হাতে হাত রেখে বলে, আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না।
_____সহিহুল জামে, হাদিস-(২৬০৪)
(৩). আনন্দ দেওয়া :
যে স্ত্রী স্বামীকে আনন্দ দিয়ে মুগ্ধ করে—সেই স্ত্রীকে সর্বোত্তম সম্পদ বলা হয়েছে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাকে মানুষের সর্বোত্তম সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করব না? তা হলো, নেককার স্ত্রী। সে (স্বামী) তার (স্ত্রীর) দিকে তাকালে স্ত্রী তাকে আনন্দ দেয়। তাকে কোনো নির্দেশ দিলে সে তা মেনে নেয়। সে যখন তার থেকে অনুপস্থিত থাকে, তখন সে তার সতীত্ব ও তার সম্পদের হেফাজত করে।
_____আবু দাউদ, হাদিস-(১৬৬৪)
(৪). সান্ত্বনা দেওয়া :
আদর্শ ও গুণবতী স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য হলো বিপদে স্বামীকে সান্ত্বনা দেওয়া ও স্বামীর অবস্থা বিবেচনা করে কথা বলা।
আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, আবু তালহা (রা.)-এর এক ছেলে মারা গেল। উম্মু সুলাইম পরিবারের সদস্যদের বললেন, আমি না বলা পর্যন্ত তাকে (আবু তালহাকে) সন্তান মৃত্যুর কথা কেউ বলবে না। আবু তালহা আসলে তার সামনে রাতের খাবার পেশ করলেন। তিনি পানাহার করলেন। এরপর সুসজ্জিত হয়ে নিজেকে স্বামীর কাছে পেশ করলেন। স্বামী আবু তালহা পরিতৃপ্ত হলে তাকে এ বলে সান্ত্বনা দেন যে কোনো সমপ্রদায় যদি কোনো দম্পতির নিকট একটি আমানত রাখে, অতঃপর তারা তাদের আমানত ফেরত নিয়ে নেয়, তাহলে আপনি সেটা কোন দৃষ্টিতে দেখবেন? তাদের নিষেধ করার কোনো অধিকার আপনার আছে কি? আবু তালহা উত্তর দিলেন, না। উম্মে সুলাইম বললেন, আপনার ছেলেকে সেই আমানত গণ্য করুন। তাকে হারানো পুণ্য বিবেচনা করুন। এ ঘটনা অবহিত হয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের গত রাতের মিলনে বরকত দান করুন। ’ এরপর উম্মে সুলাইমের একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে।
_____মুসলিম, হাদিস-(২১৪৪)
(৫). কৃতজ্ঞ হওয়া :
আদর্শ স্ত্রী আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে। স্বামীরও শোকর আদায় করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি দেখি), তার অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী। (কারণ) তারা কুফরি করে। জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কু*ফ*রি করে? তিনি বলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ হয়। তুমি যদি দীর্ঘদিন তাদের কারো প্রতি ইহসান করতে থাক, অতঃপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখতে পেলেই বলে ফেলে, আমি কখনো তোমার নিকট হতে ভালো ব্যবহার পাইনি।
_____বুখারি, হাদিস-(২৯)
(৬). কষ্ট না দেওয়া :
স্বামীকে যথাযথ সম্মান করা ও তাকে কষ্ট না দেওয়া আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো নারী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতের হুরদের মধ্যে যে তার স্ত্রী হবে সে বলে, (হে অভাগিনী!) তুমি তাকে কষ্ট দিয়ো না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তিনি তোমার কাছে আগন্তুক। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন।
_____তিরমিজি, হাদিস-(১১৭৪)
(৭). ঘরমুখী :
আদর্শ স্ত্রী লজ্জাশীল হবে। বাড়িতে অবস্থান করবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে বের হবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করো, প্রাচীন জাহেলি যুগের নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শন করো না।
_____সুরা আহজাব, আয়াত-(৩৩)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নারী হচ্ছে গোপন বস্তু। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শ*য়*তা*ন তাকে (সৌন্দর্য প্রকাশে) উদ্বুদ্ধ করে।
_____তিরমিজি, হাদিস-(১১৭৩)
(৮). অধিকার আদায়ে যত্নবান :
আদর্শ স্ত্রী আল্লাহর হক আদায়ের পাশাপাশি স্বামীর হক আদায়েও যত্নবান থাকবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, স্ত্রী ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে সক্ষম হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার স্বামীর হক আদায় না করবে।
_____ইবনে মাজাহ, হাদিস-(১৮৫৩)
(৯). পর্দা রক্ষা করা :
পর্দা ইসলামে ফরজ। নামাজ-রোজা পালন না করলে যেমন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে, তেমনি পর্দা পালন না করলেও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ন*গ্ন পোশাক পরিধানকারী নারী, যারা পুরুষদের নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধবিশিষ্ট উটের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
_____মুসলিম, হাদিস-(৫৪৭৫)

Post a Comment

0 Comments